Skip to main content

রাজধানীতে দুই দিন । সাইফুল বিন আ. কালাম

চট্টগ্রাম বন্দরের এবারের নিয়োগ-পরীক্ষা কোন এক অজানা কারণে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। দূরপাল্লার জার্নি ট্রেনেই বেশি মজা ও আরামদায়ক। যাত্রার ঠিক দশ দিন আগেই অনলাইনে (www.esheba.cnsbd.com) ও সরাসরি ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায়। হাতে স্মার্টফোন না থাকয় অনলাইনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। অন্যদিন ৯/১০টায় ঘুম ভাঙলেও সেদিন ফজরের আজানের সাথে সাথেই উঠে গেলাম। জামাতে নামাজ আদায় করে, নাস্তা-পানীয় সেরে বেড়িয়ে পড়লাম রেল-ওয়ে স্টেশনের দিকে। ভাবলাম এত সকালে হয়ত দুএকজনের বেশি আসবেনা। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার আগেই প্রায় ১০০ জনের লম্বা লাইন! কিন্তু পরিতাপের বিষয় সকাল ৯টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও আমার জাস্ট তিনজন আগেই টিকিটি শেষ। সাধারণ মানুষের হিসেবে এত আগে টিকিট শেষ হওয়ার কথা নয়। কারণ একজনকে দুটির বেশি টিকিট দিচ্ছে না। অবশেষে ৭২৫ টাকা করে দুটি এসি টিকিট নিয়ে নিলাম। ১৭ তারিখ ভোরবেলা যথারীতি আজানের সময় উঠে নামাজ আদায় করে বেরিয়ে পড়লাম ঢাকার উদ্দেশ্যে রেল-ওয়ের দিকে। জাস্ট-টাইম ৭টায় ট্রেন রওয়া দিল। সুবর্ণ এক্সপ্রেস। আমরা দুই বন্ধু সাইফুল বিন আ. কালাম ও মুজাম্মেল পাশাপাশি সিট নিয়েছিলাম। দুপুর ১টা নাগাদ কমলাপুর রেল-ওয়ে স্টেশনে পৌঁছলাম। আমাদের সেন্টার পড়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফুলার রোডে উদয়ন স্কুলে। দুজনে রিকশায় চড়ে রওয়ানা দিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে কিছুটা দূরে স্কুলটি। রিকশা থেকে নেমে ক্যান্টিনের সার্চ করতে লাগলাম। অবশেষে পেয়ে গেলাম স্কুলের সামনা-সামনি সলিমুল্লা মুসলিম হলের ক্যান্টিন। দুজনে ভাত ও মুরগি মাংস খেয়ে ৩৫ করে ৭০টাকা বিল দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়াতে ক্যান্টিনের খাবার তুলনামূলক সস্তা ও ভালো। যথাসময় বিকাল ৩:৩০শে পরীক্ষা শুরু হলো। পরীক্ষা শেষে করে আবার রিকশায় চেপে দোয়েল চত্বরের সামনে নেমে হাঁটা শুরু করলাম টিএসসির দিকে। শুক্রবারে এই জায়গাগুলোতে প্রচুর মানুষের ভিড় থাকে। আরো কিছু বন্ধু এসে ওখানে জড়ো হলো। ওদিকটায় ঘুরে সন্ধ্যাটা পার করে চলে গেলাম ফকিরাপুল হোটেলের সন্ধানে। মুক্তিযুদ্ধা গলিতে প্রচুর আবাসিক হোটেল আছে তুলনামূলক সস্তাতে। পরের দিন ভোরে উঠেই চলে গেলাম কমলাপুর রেল-ওয়ে স্টেশনে রাত ১১টার টিকিট কাটার জন্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেদিনও টিকিট পেলাম না। মতিঝিলে একটি ছোট ইন্টারভিউ ছিল। ইন্টারভিউ শেষে হাঁটা শুরু করলাম তোপখানা রোডের দিকে। উদ্দেশ্য বন্ধুকে ঢাকা-শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো দেখাব। যেহেতু সে প্রথমবার ঢাকা এসেছে। প্রথমে নয়া পল্টনে বায়তুল মোকাররম মসজিদ। সোজা আরো কিছুদূর গিয়ে জাতীয় ইদগাহ, সুপ্রিম-কোর্ট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল। দোয়েল চত্বরের ডানে মোড নিয়ে তিন নেতার মাজার (শহীদ সোহরাওয়ার্দি, খাজা নাজিম উদ্দিন ও শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক), সোহরাওয়ার্দি উদ্যান। দুজনে শোহরাওয়র্দি উদ্যানে ঢুকলাম। মিনিট-পাঁচেক পরে বের হতে চাইলে পুলিশ আর বের হতে দিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ আছে তাই প্রোগ্রাম শেষ করে বিকাল ৪টায় বের হতে হবে। পুলিশ কিছুতেই কারো কথা মানছে না। অনেক অসুস্থ রোগী ও মহিলারাও আটকা পড়েছে। অবশেষে তরুণ ও যুবকেরা পশ্চিম পাশে দেয়াল টপকিয়ে লাফ দিয়ে মুক্তি পাচ্ছে। আমি ও আমার বন্ধু ফরমাল ড্রেসে থাকায় কয়েকবার চেষ্টা করেও পারিনি। কিন্তু এভাবে ৪ ঘণ্টা এক জায়গাই বসে থাকা তাও আবার বিরক্তিকর রাজনৈতিক প্রোগ্রামে কোনভাবেই সম্ভব না। তাই অনেক চেষ্টা করে ও কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে দেয়ালে উঠে গেলাম। পেছন থেকে পুলিশের লাঠির ঘা পড়ার আগেই লাফ দিতে গিয়ে পায়ে হালকা মচকা লাগল। বন্ধুও একইভাবে লাফ দিয়ে পার হলো। রাস্তার ওপারে বাংলা একাডেমি (সাবেক বর্ধমান হাউস)। একাডেমিতে এশিয়ার সর্ববৃহৎ সাহিত্য উৎসব “Dhaka Lit Fest” হচ্ছে। আজ শেষ দিন। এখানে রেজিস্ট্রেশন করে প্রবেশ করলাম। এখানে নজরুল মঞ্চে বাংলা স্টেজ করা হয়েছে যেখানে প্যানেল আলোচনা, মুখোমুখি সাক্ষাৎকার, বই পড়া, আবৃত্তি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে। অন্য পাশে ইংলিশ স্টেজ করা হয়েছে সেখানে বিদেশি অতিথিরা প্যানেল আলোচনা করছে। সামনে ইংলিশ ও বাঙালি শ্রোতারা ছিল। চারপাশে প্রচুর বাংলা ইংরেজি বইয়ের স্টল বসেছে ও দেশি বিদেশি উন্নতমানের খাবার দোখানও বসেছে। আমরা অনেক সার্চ করেও সস্তা কোন খাবার পেলাম না। প্রথমার স্টল থেকে একটা বই নিলাম, নাম ” খটকা বানান অভিধান”। এরপর এখান থেকে বের হয়ে শাহবাগের দিকে চললাম। চলতে চলতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, টিএসসি, কবি নজরুলের কবর ইত্যাদি দেখলাম। কবি নজরুলের কবরের পাশ দিয়ে ঢাবির ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে কেক ও রং চা খেলাম। তার আগে টিএসসিতে ভাপা পিঠা খেয়েছিলাম। তারপর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে সময়ের অভাবে প্রবেশ করলাম না। আবার হাঁটা শুরু করলাম পান্থপথ বসুন্ধরা সিটির উদ্দেশ্যে। বসুন্ধরা সিটি ঘুরে খুবই ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে মতিঝিলের বাস ধরলাম। সেখান থেকে আবার রিকশায় চড়ে ফকিরাপুল নিজেদের হোটেলে উঠে লম্বা রেস্ট করলাম। ফকিরাপুল থেকেই রাত ১১টার বাসের টিকিট কাটলাম। বাসে ২০/২২ বছরের একটি মেয়ে উঠে সবাইকে দুটি করে চকলেট ও একটি ছোট কাগজ ধরিয়ে দিল। কাগজে লিখা ছিল;
“জনাব আসসালামু আলাইকুম। আমি একজন গরিব অসহায় মেয়ে। আমার বাবা নেই, বড় ভাই নেই, অসুস্থ মা ঘরে পড়ে আছে। আমাদের সংসার চালানোর কেউ নেই। তাই আমি আপনাদের নিকট চকলেট বিক্রি করি। চকলেট কিনে আমাকে আমার মায়ের চিকিৎসা ও আমাদের সংসার চালাতে সাহায্য করুন। দয়া করে কাগজখানা ফেলবেন না। নিবেদীকা, কাজল”
ঢাকা-শহরে কতরকম ধান্ধাবাজ যে আছে তা অনেকেই জানেন। তাই আমি ইনস্ট্যান্ট চকলেট ও কাগজ ফেরত দিলাম। কিছুক্ষণ পরে সবার কাছে মেয়েটি দশ টাকা করে চাচ্ছে। কী আজব ব্যবসা! মেয়েটি মোটামুটি শ-তিনেক পেয়েছে দেখলাম। এরপর বাস জোরে চলতে শুরু করলে, বাসের সিট ভেঙে দিয়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। এই ছিল রাজধানীতে দুদিনের গল্প।

Comments

Popular posts from this blog

কম্পিউটারে আরবি লিখন পদ্ধতি ও কিছু কথা (قَاعِدَةُ كِتَابَةِ الُّغَةِ العَرَبِيِّ فِي كَمْبِيُوتَرَ واقْوَالِهَا)

যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম  হলো ভাষা। পৃথিবীতে প্রায় ৭০০০-এরও অধিক ভাষা  (اللُّغَةُ) প্রচলিত রয়েছে। এসব ভাষায় বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীরা তাদের ভাব বিনিময় করে। তবে পৃথিবীর সব মানুষই তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ জন্যই কবি রামনিধি গুপ্ত বলেছেন-  “নানান দেশের নানা ভাষা  বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা?”   এরপরও বৈশ্বিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষকে বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করতে হয়।  ইংরেজি ও আরবি তার মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া মুখাভিনয়ের মাধ্যমেও মানুষ গ্লোবালি কমিউনিকেট করতে পারে। মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে আরবি ভাষা শিখাটা খুবই জরুরি। কুরআন ও হাদিসের প্রকৃত মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হলে আরবি ভাষা জানার বিকল্প নেই। আধুনিক শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার কম্পিউটার। কম্পিউটারের একেবারে প্রাথমিক ও মৌলিক স্কিল হচ্ছে টাইপিং। কম্পিউটার টাইপিং-এর সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো ফলো করলে খুব সহজে পৃথিবীর যে কোন ভাষা টাইপ করা যায়। আমি সাইফুল বিন আ. কালাম , ইংরেজি, বাংলা ও আরবি তিন ভাষারই টাইপিং পদ্ধতি নিয়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল বানিয়েছি। বাংলা টা...

শিখুন ম্যাগাজিন ও বইয়ের প্লেট / সিটিপি সেটিং (জুরি)

একটি অ্যাড ফার্মে কাজ করতাম বছর তিনেক আগে। বই ও ম্যাগাজিনের অনেক কা জ করেছি। নির্দিষ্ট সাইজ নিয়ে .৭৫ ইন্সি অপসেট পাথ রেখে পেজকে কাজ অনুযায়ী দু কলাম তিন কলামে ভাগ করে লিংক করে কাজ করাটাই ডিজাইন। প্রতি ৮ পেজে ফর্মা হিসেব করে কাজ করতাম। কিন্তু বিপত্তিটা হতো আউটপুট সেটিং দিতে গিয়ে। শাফুল দা পেছনে বসে ডিরেকশন দিতো, আর আমি সেটিং দিতাম। ভাল করে বুঝতাম না। উনিও অত ইজি করে বোঝান নি। আমিও শেখার খুব আগ্রহ দেখাইনি কারণ সময়মত শাফুল দাকে তো পাচ্ছিই; তাহলে শুধু শুধু এত প্রেশার নিয়ে লাভ কী! কিন্তু একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাত্র বুঝবেন আউটপুট সেটিং যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতই ডিজাইন জানেন, প্রিন্টিং আউটপুট সেটিং যদি না বুঝেন, আপনাকে সঠিক মূল্যায়ন করা হবে না। ভাল প্রতিষ্ঠানে গেলেই প্রথম প্রশ্ন আউটপুট ছাড়তে পারবেন কি না? আউটপুট সেটিং ডিজাইনের প্রাণ। অবশ্য যারা শুধুই ফ্রিল্যান্সিং করেন, লোকাল কোম্পেনিতে কাজ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে এটা না জানলেও তেমন সমস্যা হবে না। তবে এ শিল্পে পেশাদার হতে হলে অবশ্যই প্রিন্ট আউটপুট সেটিং জানতে হবে। এরপর গুগল ও ইউটিউবে অনেক সার্চ করেও ভাল প্রিন্ট আউটপুট সেটিং...

☀☀ Excel-এ Salary Sheet তৈরি করুন ২০মিনিটে ☀☀

▶ https://youtu.be/LCISl9ewGWs ☑ কম্পিউটারের জন্ম ও নামকরণ সার্থক করে তুলেছে মাইক্রোসফট এক্সেল (Microsoft Excel)। প্রোগ্রামার না হয়েও প্রোগ্রামিং-এর স্বাদ পাওয়া যায় মাইক্রোসফট এক্সেলে কাজ করে। এক্সেলের অনেক স্বার্থক প্রজেক্টের মধ্যে একটি অন্যতম প্রজেক্ট হচ্ছে সেলারি শিট (Salary Sheet) তৈরিকরণ। ☑ যেকোন কোম্পানির মানব সম্পদ বা হিসেব রক্ষক বিভাগে চাকরি হলে সেলারি শিট তৈরি করা জানতে হবে। সেলারি শিট তৈরি করেতে (To prepare Salary Sheet) সাধারণ যোগ-বিয়োগের ক্যালকুলেশন ছাড়াও কন্ডিশনাল ফাংশনের কাজ করতে হয়। সেলারি শিট তৈরির এই কাজটি জটিল ও কষ্টসাধ্য মনে হলেও আমি (সাইফুল বিন আ. কালাম) এই ভিডিওতে কাজটি অত্যন্ত সহজ করে দেখিয়েছি যা দেখে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীও এক্সেলে সেলারি শিট তৈরি করতে পারবেন। ☑ এটি এক্সেলের সিরিজ টিউটোরিয়ালের ৬ষ্ঠ পর্ব। আগের ক্লাসগুলো যারা মিস করেছেন, তারা এই লিংক থেকে দেখে আসতে পারেন: https://www.youtube.com/playlist?list=PLa1dVaFIG9UdVf-5XiW273WOqsE-PUw4Y ☑ মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ধারাবাহিক টিউটোরিয়ালগুলো দেখতে এই লিংকে ঘুরে আসুন: h...