Skip to main content
বাবা তোর তিন বোনকে তো ইফতারি পাঠাতে হবে। গত বছর ইফতারি কম হয়েছিল বলে লাবনীর শ্বশুরবাড়ি থেকে নানা কথা শুনতে হয়েছিল। টাকাটা একটু বাড়িয়ে দিস বাবা যাতে বেশি করে ইফতার কিনতে পারি। ওকে আম্মু, গত বছরের দ্বিগুণ ইফতার পাঠাবে। আমি টাকা পাঠাচ্ছি।

এদিকে শফিকুল নতুন একটা ব্যবসা শুরু করবে বলে কিছু টাকা জমানো শুরু করেছিল। অল্প বেতনের চাকরি। পকেট খরচ থেকে অল্প অল্প বাঁচিয়ে ছয় মাসে 12000 টাকা জমিয়েছিল। এই বারো হাজার টাকার পুরোটাই মায়ের ফোনে বিকাশ করে দিল। বোনদের শ্বশুরবাড়িতে বেশি করে ইফতারি পাঠানোর জন্য।

শফিকুল এর ভগ্নিপতিরা আর্থিকভাবে খুবই সচ্ছল। তবু শ্বশুরবাড়ি থেকে হাদিয়া না আসলে নিজের প্রেস্টিজে লাগে। না হয় এগুলো তাদের জন্য কিছুই না।

এদিকে শফিকুলের মাও অন্য দশজনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে সংসারে নানা অভাব থাকলেও মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে মৌসুম অনুযায়ী হাদিয়া পাঠাতে ভুল করেনা।

সফিকুলের বোন মিফতার শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়ি, জামাই ও একজন জা ছাড়া আর কেউ নাই। তার বড় ভাবির বাপের বাড়ি থেকেও অনেক বেশি পরিমাণে ইফতারি এসেছে। বাড়িতে মিফতার স্বামীও প্রথম রমজানের দিনে পুরো রমজানের জন্য বাজার, ইফতারি সব কিছু কিনে দিয়েছিল। পুরুষ মানুষের মনে কে কি পাঠাবে এত কিছু থাকে না। বাড়িতে বেশি ইফতার হয়ে যাওয়াতে শফিকুলের মায়ের পাঠানো ইফতার মিফতার শাশুড়ি এলাকার কয়েকজন গরিব কে ভাগ করে দেয়। এক গরীব থেকে ডাকাতি করে অন্য গরিবকে দান করা। জানিনা এতে আদৌ সওয়াব হবে কিনা!

এদিকে শফিকুল বেতন-বোনাস পেয়ে মায়ের জন্য শাড়ি, ভাই বোনের জন্য কাপড়-জুতোসহ অন্যান্য সব কিনে ইদের 10 দিন আগে সব কিছু পাঠিয়ে দেয়। ইদের নতুন কাপড় পেয়ে সবাই দারুন খুশি। মা ফোন করে বলল, বাবা তোর বোনদের শ্বশুরবাড়িতে সবার জন্য কাপড় পাঠাতে হবে। ইদ তো আর বেশি দিন নাই। একটু আগেভাগে পাঠিয়ে দে বাপ আমার। শফিকুল 2 সেকেন্ড অন্যমনস্ক হয়ে গেল, পরক্ষণেই বলে, ওকে মা। কার জন্য কি নিতে হবে বল। সফিকুলের মা মোটামুটি লম্বা একটা লিস্ট করে দিল। সফিকুলের ইদের বাজেট ইতোমধ্যে শেষ। একজন কলিগ ও এক কাছের বন্ধু থেকে কিছু টাকা ধার করে বাকি বাজারটুকু করে বাড়ি পাঠালো।

ইদের তিন দিন আগে শফিকুলের ম্যাসের ভাড়া ও মিল করস দেওয়ার কথা। পকেটে কোনো টাকা নেই। তাছাড়া বেতন-বোনাস আগেই শেষ। আরো অনেক টাকা কর্জ হয়ে গেছে। আরেক রুমমেটকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে কিছু টাকা ধার করে রুম ভাড়া ও খাবার টাকা পরিশোধ করল। অন্য এক বন্ধু থেকে ফোন করে আরো কিছু টাকা ধার করে শফিকুল ইদের বাজার করে বাড়ীতে যাচ্ছে। শফিকুল দূরপাল্লার বাসে উঠলেই গাড়ি চলতে না চলতেই ঘুমিয়ে পড়ে। এটি সফিকুলের ছোটবেলার অভ্যাস। কিন্তু আজ সফিকুলের চোখে ঘুম নেই। সে ভাবছে, এই দেনার টাকা পরিশোধ করতে তার আগামী বছর পুরোটা লেগে যাবে। ব্যবসাটা আর করা গেলো না।

Comments

Popular posts from this blog

কম্পিউটারে আরবি লিখন পদ্ধতি ও কিছু কথা (قَاعِدَةُ كِتَابَةِ الُّغَةِ العَرَبِيِّ فِي كَمْبِيُوتَرَ واقْوَالِهَا)

যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম  হলো ভাষা। পৃথিবীতে প্রায় ৭০০০-এরও অধিক ভাষা  (اللُّغَةُ) প্রচলিত রয়েছে। এসব ভাষায় বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীরা তাদের ভাব বিনিময় করে। তবে পৃথিবীর সব মানুষই তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ জন্যই কবি রামনিধি গুপ্ত বলেছেন-  “নানান দেশের নানা ভাষা  বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা?”   এরপরও বৈশ্বিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষকে বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করতে হয়।  ইংরেজি ও আরবি তার মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া মুখাভিনয়ের মাধ্যমেও মানুষ গ্লোবালি কমিউনিকেট করতে পারে। মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে আরবি ভাষা শিখাটা খুবই জরুরি। কুরআন ও হাদিসের প্রকৃত মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হলে আরবি ভাষা জানার বিকল্প নেই। আধুনিক শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার কম্পিউটার। কম্পিউটারের একেবারে প্রাথমিক ও মৌলিক স্কিল হচ্ছে টাইপিং। কম্পিউটার টাইপিং-এর সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো ফলো করলে খুব সহজে পৃথিবীর যে কোন ভাষা টাইপ করা যায়। আমি সাইফুল বিন আ. কালাম , ইংরেজি, বাংলা ও আরবি তিন ভাষারই টাইপিং পদ্ধতি নিয়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল বানিয়েছি। বাংলা টাইপিং টিউটোরিয়াল: https://youtu.be/

শিখুন ম্যাগাজিন ও বইয়ের প্লেট / সিটিপি সেটিং (জুরি)

একটি অ্যাড ফার্মে কাজ করতাম বছর তিনেক আগে। বই ও ম্যাগাজিনের অনেক কা জ করেছি। নির্দিষ্ট সাইজ নিয়ে .৭৫ ইন্সি অপসেট পাথ রেখে পেজকে কাজ অনুযায়ী দু কলাম তিন কলামে ভাগ করে লিংক করে কাজ করাটাই ডিজাইন। প্রতি ৮ পেজে ফর্মা হিসেব করে কাজ করতাম। কিন্তু বিপত্তিটা হতো আউটপুট সেটিং দিতে গিয়ে। শাফুল দা পেছনে বসে ডিরেকশন দিতো, আর আমি সেটিং দিতাম। ভাল করে বুঝতাম না। উনিও অত ইজি করে বোঝান নি। আমিও শেখার খুব আগ্রহ দেখাইনি কারণ সময়মত শাফুল দাকে তো পাচ্ছিই; তাহলে শুধু শুধু এত প্রেশার নিয়ে লাভ কী! কিন্তু একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাত্র বুঝবেন আউটপুট সেটিং যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতই ডিজাইন জানেন, প্রিন্টিং আউটপুট সেটিং যদি না বুঝেন, আপনাকে সঠিক মূল্যায়ন করা হবে না। ভাল প্রতিষ্ঠানে গেলেই প্রথম প্রশ্ন আউটপুট ছাড়তে পারবেন কি না? আউটপুট সেটিং ডিজাইনের প্রাণ। অবশ্য যারা শুধুই ফ্রিল্যান্সিং করেন, লোকাল কোম্পেনিতে কাজ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে এটা না জানলেও তেমন সমস্যা হবে না। তবে এ শিল্পে পেশাদার হতে হলে অবশ্যই প্রিন্ট আউটপুট সেটিং জানতে হবে। এরপর গুগল ও ইউটিউবে অনেক সার্চ করেও ভাল প্রিন্ট আউটপুট সেটিং-এর

সমাস শিখতে এখন আর ছয় মাস লাগেনা

সমাসের কাজ হলো একাধিক পদকে এক পদে পরিণত করা। সমাস শব্দের অর্থ হচ্ছে সংক্ষেপন বা লম্বা একটা বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করে এক শব্দে প্রকাশ করা। যেমন: শোক প্রকাশের সভা > শোকসভা। এখানে শোকসভাই হলো মূলত সমাস। আর শোক প্রকাশের সভা হলো সমাস বাক্য বা ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্য। আমরা জানি বাক্যের অন্তরগত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে আর সমাস বাক্য বা ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্যের প্রত্যেকটি শব্দকে সমস্যমান পদ বলে। আর সমাসকে অর্থাৎ ব্যাস বাক্য থেকে সংক্ষিপ্ত হওয়া পদটিকে বলে সমস্ত পদ। সমাজ ছয় প্রকার: আমার জনৈক বন্ধু সমাসের ছয় প্রকার কোন ভাবেই মনে রাখতে পারতো না। সে বলতো দিক অত বদদোয়া তবু আমি সমাসের ছয় প্রকার মনে রাখতে পারবনা। কিন্তু দিক অত বদদোয়া র মাঝেই সমাসের ছয় প্রকার রয়েছে।  দি = দ্বিগু ক = কর্মধারয় অ = অভ্যয়ীভাব ত = তৎপুরুষ ব = বহুব্রীহি দ = দ্বন্দ্ব প্রথমে আমরা কর্মধারয় সমাস নিয়ে বিস্তারিত শিখব। যে সমস্থ সমাসে আমরা কোন কিছুর সাথে তুলনা করি (বাস্তব, অবাস্তব বা রূপক) সেটিই কর্মধারয় সমাস। কর্মধারয় সমাস ৩ (তিন) প্রকার। উপমান  উপমিত রূপক উপমান শব্দের মাঝে আছে (উপমা), যেই উপমা সত্য