রাজনীতির হাতেখড়ি হয় বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের সক্রিয় সমর্থক, কর্মী ও সর্বশেষ শপথের সাথী হিসাবে। আমাদের ছোট বেলার রাজনীতি ছিল, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, প্রতিদিন কোরআন ও হাদিস অর্থসহ পড়া, গোলাম আযম, সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীসহ আরো বিভিন্ন ইসলামিক স্কলারদের বই পড়া, প্রতিদিন মিনিমাম ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পাঠ্যবই পড়া ও দিনশেষে সারাদিনের কর্মকাণ্ডের উপর আত্ম-সমালোচনা করা। মাস শেষে দায়িত্বশীলদের হাতে ৫, ১০, ২০ বা সামর্থ্য অনুযায়ী বায়তুল মাল দেওয়া ও পুরো একমাসের নামাজ, কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন, ইসলামিক বই পড়া এবং অ্যাকাডেমিক পড়াশুনার হিসাব দেওয়া। ছাত্রদেরকে সংগঠনের দাওয়াত দিতাম এবং দৈনন্দিন স্টাডিগুলো বুঝিয়ে দিতাম। নির্বাচন আসলে জামাত ইসলামির প্রার্থীদের জন্য ভাই-ব্রাদার ও মা-বোনদের কাছে ভোট চাইতাম। এই ছিল আমাদের রাজনীতি। এলাকায় কিছু প্রবীণ আওয়ামীলীগ থাকলেও ছাত্রলীগ বা ছাত্র দলের তেমন কোন অস্তিত্ব ছিল না বিধায় ছাত্র শিবির ছাড়া অন্য কোন রাজনীতি খুব একটা দেখিনি। তবে দুই একজনকে শুনতাম ওরা ছাত্রলীগ বা অন্য রাজনীতি করে কিন্তু এরা ছিল এলাকার সবচেয়ে বকাটে ও অশিক্ষিত টাইপের এবং পরিমানেও খুবই কম। তবে বর্তমানে অনেক ভাল, ভদ্র, উচ্চ-শিক্ষিত ও মার্জিত চরিত্রের ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল বন্ধুদেরকে আমি চিনি এবং আমার সাথে ব্যক্তিগত সখ্যও আছে। তখন স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর নামে নেগেটিভ কথা-বার্তা শুনতাম ও মনে প্রাণে বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী রাজনীতিকে ঘৃণা করতাম। পরবর্তীতে জামাত ইসলামী বা ছাত্র শিবিরের লিস্টেট বই ছাড়াও অন্যান্য বই ও ম্যাগাজিন সর্বোপরি ইন্টারনেটভিত্তিক নানা ব্লগ, ই-বুক ও পত্রিকা পড়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনী সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়। অন্তত এটুকু পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন অন্যতম অবিসংবাদিত নেতা। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন তৎকালীন সব বাঙ্গালীর আশা-ভরসার একমাত্র জায়গা এবং যোগ্য নেতৃত্ব। তিনিই বাঙ্গালী জাতিকে পাকিস্তানের গোলামের আসন থেকে বের করে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ও তাঁর নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয় এবং আমরা পায় স্বাধীনতার অমিয় স্বাদ। স্বাধীনতা পরবর্তী বাকশাল নিয়ে হাজারও মান-অভিমান ও বিতর্ক থাকলেও উনার এতদিনের অবদান ও ত্যাগ আমরা মুহূর্তেই ভুলে যেতে পারি না। তিনি যৌবনের ১৭টা বছর জেলে কাটিয়েছেন কার জন্য? প্রতিটি মুহূর্তে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরোধী রাজনীতি করা কতটা কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ তা আজকের জামাত-শিবির ও বিএনপিসহ সকল আওয়ামী বিরোধী জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন তাগের বুঝা উচিত। আজকে অনেকে সরকার বিরোধী একটা ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিতেও ভয় পাই, আর এরকম বা তার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতিতে তিনি দেশময় তৎকালীন মুসলিমলীগ বিরোধী স্লোগান ও বক্তৃতা দিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম রেখেছিলেন ও নানা সময়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি জাতির পিতা উপাধিটি কিনে নেন নি, রক্ত-মাংস ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অর্জন করেছেন। কেউ মানুক বা না মানুক শেখ মুজিবই জাতির পিতা। বিশ্বের ৩০টিরও অধিক দেশের জাতির পিতা আছে যারা দেশ-মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সুতরাং জাতির পিতা নিয়ে আর নয় বাড়াবাড়ি, দল যার যার, জাতির পিতা সবার। অনেকে আবার অতি বাড়াবাড়ি করার জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) কে নিয়ে আসেন শেখ মুজিবের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য। আরে মূর্খরা জেনে রাখ- শেখ মুজিব শুধু বাঙ্গালি জাতির পিতা, আর হযরত ইব্রাহিম (আ.) গোটা মুসলিম জাতির পিতা। আদম (আ.) ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের পিতা। কিসের সাথে কী তুলনা করেন? এক কোটি শেখ মুজিব এনে দিলেও আল্লাহর পয়গম্বরের পায়ের ধুলোর সমমান হবে না? শেখ মুজিব একজন উচ্চমানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনে অনেক ভুল ভ্রান্তি ও দোষ থাকতে পারে। কিন্তু যেটা সত্য সেটা কেন আমরা অস্বীকার করব? আসুন সত্যকে মেনে নিই, মর্যাদাবান মানুষকে মর্যাদা দিতে শিখি।
সাইফুল বিন আ কালাম - ব্লগ লেখক at- http://saifulbinakalampost.blogspot.com/
ইউটিউবার at- https://www.youtube.com/saifulbinakalampost
Comments
Post a Comment