Skip to main content

স্যাটেলাইট রহস্য ও বঙ্গবন্ধু-১

পদার্থবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের তৃতীয় সূত্রমতে, প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। তাই বলে কি কর্ম বন্ধ হয়ে যাবে? থেমে যাবে অগ্রযাত্রা? বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ একটি সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে গেল প্রতিযোগিতার টেক দুনিয়ায়। নিন্দুকেরা সবসময় নিন্দাই করে যাবে। কোন কাজের ভাল দিক তাদের চোখে পড়বে না। কারণ তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নিন্দা চালিয়ে যাওয়া। একটা নেগেটিভ কথা দিয়ে লেখাটা শুরু করতে হলো এ জন্য যে, সোশাল প্লাটফর্মে বেশিরভাগ মানুষই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে নানা নেগেটিভ পোস্ট ও মন্তব্য দিয়ে যাচ্ছে, তাই।

একটা প্রজেক্টে লাভ-লোকসানের আশংকা থাকতেই পারে। তাই বলে কি বাংলাদেশ কোন দিনও নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হবে না? চ্যালেঞ্জ না নিলে বড় কিছু অর্জন সম্ভব হয় না। ভারত যখন প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছিলো, তখন ভারতের জনগণও একইভাবে স্যাটেলাইটের বিরোধিতা করে ছিল। তারপরেও কি ভারত স্যাটেলাইট প্রজেক্টে লস করেছে?  BS-1ও বাংলাদেশর একটি বিগ বাজেটের চ্যালেঞ্জ যা সফল হলে আগামী ৬/৭ বছরেই লাভের মুখ দেখতেও পারে বাংলাদেশ। তাছাড়া এটি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক প্রজেক্ট নয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আর্থিক ছাড়াও আরো নানাভাবে সহায়তা করবে বাংলাদেশকে যার বিবরণ পুরো লেখাটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।

তবে অনেক দেশ এক রকেটেই এক যাত্রায় একাধিক স্যাটেলাইট একসাথে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে। তখন স্যাটেলাইট প্রকল্পের বাজেট ব্যয় অনেক কম হয় ফলে লাভও অনেকটা নিশ্চিত করা যায়। অপরদিকে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ আগে নিজেরায় স্যাটেলাইট বানায়, তারপর মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে। যার সবচেয়ে কাছের উদাহরণ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। তারা নিজেদের স্যাটেলাইট নিজেরাই বানিয়েছে যার ফলে তাদের স্যাটেলাইট বাবদ বাজেট ব্যয় অনেক কম হয়েছে এবং তাতে বাণিজ্যিকভাবে লসের সম্ভাবনাও একেবারে কম। যেটা আমাদের বাংলাদেশ চাইলে আগে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চাইতে বানানোতেই বেশি জোর দিতে পারত। সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো আরো কিছুদিন পরে স্যাটেলাইটের মালিক হতাম তবুও এত লাভ-লোকসানের প্রশ্ন উঠত না। এখন জেনে নেওয়া যাক স্যাটেলাইট সম্পর্কে আরো কিছু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।

স্যাটেলাইট (Satellite) শব্দের অর্থ উপগ্রহ। মহাকাশে চাঁদ-সূর্যের বাইরেও  কোটি-কোটি গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু ও তারকাপুঞ্জরা রয়েছে। যেগুলো প্রতিনিয়ত মহাকাশের নির্দিষ্ট কক্ষপথে নিজ নিজ অবস্থানে পরিভ্রমণ করছে ও সৃষ্টির উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। যেভাবে আল-কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ৩৩নং আয়াতে বলা হয়েছে….
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।

প্রাচীনকাল থেকেই মহাকাশ নিয়ে নানা গবেষণা হয়ে আসছিল। বিজ্ঞানের জয় যাত্রা শুরু হলে অ্যারিস্টটল ও টলেমীরা প্রথম বলা শুরু করল, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ও অন্যান্য সবাই ঘুরে। এটাতে বিজ্ঞান বেশি দিন স্থির থাকতে পারল না। এরপর বিজ্ঞানী কোপার্নিকাস ও দূরবীন আবিষ্কারক গ্যালিলিও চার হাজার বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠিত “বৈজ্ঞানিক থিউরিকে” মিথ্যা প্রমাণ করে বললেন, পৃথিবী ও অন্যরাই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে। এই সৌরজগতের (Solar System) মূল অধিপতি আসলে সূর্য। এবং সর্বশেষ প্রমাণিত হয় যে, আসলে সৌরজগতের সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে।

পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে মানব সভ্যতার বসবাস রয়েছে। প্রতিটি গ্রহেরই এক বা একাধিক উপগ্রহ থাকতে পারে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হলো চাঁদ যার মূল উৎস প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রান্স খাদ। চাঁদ আহ্নিক গতির মাধ্যমে জোয়ার-ভাটা ও বার্ষিক গতির মাধ্যমে সময় নির্ণয় এবং অন্ধকার রাতের দুনিয়ায় আলো বিকিরণ ছাড়াও আরও নানাবিধ কাজ করে থাকে।

মহান আল্লাহ সূরা ফুরকানের ৬১নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন;
تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُنِيرًا
কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।
চাঁদের একটি অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে, পথহারা পথিককে পথ নির্দেশ করে ও চাঁদের মাধ্যমে মানুষ বছর গণনা ও সময়ের হিসেব করে। যেমন সূরা ইউনুসের ৫নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন;
هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَٰلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে উজ্জ্বল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারী রূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনজিলসমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে।
চাঁদকে নিয়ে এত কথা বললাম শুধু স্যাটেলাইট বুঝার জন্য। চাঁদ সৃষ্টিকর্তার তৈরি স্যাটেলাইট। আর আমাদের BS-১ আমাদের তৈরি কৃত্রিম স্যাটেলাইট। চাঁদের উপকারিতা ও কার্যকারিতা তো বললামই, এবার বলব মানুষের তৈরি স্যাটেলাইটের উপকারিতা ও কার্যকারিতা এবং কিছু পরিসংখ্যান।

বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম যোগাযোগ (Communication & Broadcast) উপগ্রহ বিএস-১। ২০০৮ থেকে এর পরিকল্পনা শুরু হয়ে ২০১৮তে এটি ফাইনালি মহাকাশে উড্ডিত হয়। এটি ১১ মে ২০১৮  তারিখে, বাংলাদেশ মান সময় ১২ মে ভোর ০২:১৪ তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে শুক্রবারের প্রথম প্রহরে মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়। এই প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয় এবং এটি ফ্যালকন-৯ ব্লক-৫ রকেটের প্রথম পেলোড উৎক্ষেপণ ছিল। এই রকেটটি অবশ্যই পুনরায় ব্যবহারযোগ্য অর্থাৎ বিএস-১ বহনকারী রকেটটি ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশের আরো স্যাটেলাইট বহন করে মহাকাশে নিয়ে যেতে পারবে।

এটি বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট নয়। এর আগে বেসরকারিভাবে ব্র্যাক অন্বেষার তিনজনের একটি টিম প্রথম একটি ১ কেজি ওজনের ন্যানো স্যাটেলাইট (ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ) মহাকাশে পাঠিয়েছিল। যার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১মাস। মহাকাশ থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, নদী, ফসলের মাঠ থেকে শুরু করে শহর, পাহাড়-সাগর সবকিছুরই পর্যায়ক্রমিক আলোকচিত্রও এই উপগ্রহ থেকে পাওয়া গিয়েছে। মূলত বাংলাদেশের তিন-চারটি সংস্থা গবেষণায় কৃত্রিম উপগ্রহের নেওয়া ছবি ব্যবহার করে। এগুলোর মধ্যে আছে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস), ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম), স্পারসো ও আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ৫৭টি দেশ  যারা এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজারেরও অধিক স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে। এখন পর্যন্ত মহাকাশ অরবিটে ২ হাজারেরও অধিক স্যাটেলাইট সক্রিয়ভাবে ভেসে বেড়াচ্ছে। মহাকাশে বস্তুর ওজন শুণ্য হওয়ায় এখানে যেকোনো ওজনের বস্তু সহজেই ভেসে থাকতে পারে। কারণ এখানে মধ্যাকর্ষন শক্তি কাজ করে না। তার মধ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে ১৫০৪টি যার প্রথম দুটি স্যাটেলাইট ছিল স্পুটনিক-১ ও ২, পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ১৬১৬টি, চিন ২৯৮টি, জাপান ১৭২টি, ফ্রান্স ৬৮টি, ব্রিটেন ৪২টি, দক্ষিণ কোরিয়া ১৮টি, স্পেন ২৩টি, তুরস্ক ১৪টি, সৌদি আরব ১৩টি, পাকিস্তান ৩টি, কেনিয়া ১টি, ফুটবলের দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা যথাক্রমে ১৭ ও ১৮টি আর আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ৮৮টি স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিন স্যাটেলাইট রাজত্বে শীর্ষে।

বিএস-১ নির্মাণের জন্য দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া ‘বিডার্স ফাইন্যান্সিং’ এর মাধ্যমে এ প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হংক সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (এইচএসবিসি) সাথে সরকারের প্রায় একহাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি  হয়। এক দশমিক ৫১ শতাংশ হার সুদসহ ১২ বছরে ২০ কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি ১১৯.১° ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার ভূস্থির স্লটে স্থাপিত হয়েছে। যা ইন্দোনেশিয়া ও মালেশিয়ার মাঝামাঝিতে অবস্থিত।  বাংলাদেশের বরাবর উপরে অন্যদেশের একটি উপগ্রহ ইতোমধ্যে স্থাপিত হওয়াই বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্যাটেলাইট নিজ দেশ বরাবর স্থাপন করতে পারে নি। যার কারণে বাংলাদেশ মিডল ইস্টের দেশগুলোতে চ্যানেল প্রিকোয়েন্সি ভালোভাবে কাভার করতে না পারার সম্ভাবনা আছে। অথচ বাংলাদেশের এক বিরাট অ্যামাউন্টের চ্যানেল দর্শক রয়েছে আরব দেশগুলোতে। যার কারণে এই অজুহাত দেখিয়ে আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলো আমাদের কাছ থেকে ফ্রিকোয়েন্সি না কিনে বরাবরের মত বিদেশি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করলে বলার কিছুই থাকবে না। তাছাড়া অন্যান্য দেশুগুলোর একাধিক স্যাটেলাইট ইতোমধ্যে মহাকাশে অবস্থান করায়, তারা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম দামে তাদের ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকেরাও কম দামে পেতে বেশি দামে কিনবে কিনা এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। তারপরেও সুযোগ-সুবিধা ও সেবার মান দেখিয়ে ব্যবসায়িক পলিসি নির্ধারণ করে হয়তো বাংলাদেশ তার নির্দিষ্ট গ্রাহকদের ধরতে পারবে।
এটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস কর্তৃক নকশা ও তৈরি করা হয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৪০টি কু এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করবে যার ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশ ব্যবহার করবে আর বাকী ২০টি পৃথিবীর অন্যান্য দেশুগুলোকে ভাড়া দেবে। এটির আয়ু ১৫ বছর হওয়ার কথা ধরা হচ্ছে তবে মেরামতের মাধ্যমে আরো কিছুদিন বেশি এর স্থায়িত্ব হতে পারে যা আনুমানিক ২০ বছর। স্যাটেলাইটের বাইরের অংশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু-১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এর জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ভূকেন্দ্র তৈরি করা হয়। জয়দেবপুরের ভূ-কেন্দ্রটি হবে মূল স্টেশন। আর বেতবুনিয়ায় স্টেশনটি ব্যাক-আপ হিসেবে রাখা হয়।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে ৩ ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে।
• টিভি চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্যাটেলাইট ভাড়া করে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। আবার দেশের ভিটি চ্যানেলগুলো যদি এই স্যাটেলাইটের সক্ষমতা কেনে তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এর মাধ্যমে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস চালু সম্ভব। যদি কেনে আর কি!

• বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হলো ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ। এর ব্যান্ডউইডথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ইন্টারনেটবঞ্চিত অঞ্চল যেমন পার্বত্য ও হাওড় এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।

• বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। তখন এর মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।

দেখা যাচ্ছে বিশ্ব মানচিত্রের ২০০টি দেশের অগ্রগামী দেশগুলো আস্তে আস্তে স্যাটেলাইটের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ কি বসে থাকবে। আমরাও কি অগ্রগামী দেশগুলোর সাথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হব না? মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তো সেই ১৯৮০’র সময়েই স্যাটেলাইট নিয়ে চিন্তা করেছিলেন যেটা আমরা তারেক জিয়ার বক্তব্য থেকে জানতে পারি: https://youtu.be/E5f_6Tg34IQ

অর্থাৎ স্যাটেলাইট কোন সমালোচনার বিষয় নয়, স্যাটেলেইট এগিয়ে যাওয়ার একটি পদক্ষেপ। তাই সমালোচনা না করে পজিটিভলি চিন্তা করুন। দেশ এগিয়ে যাবে, নিজেও এগিয়ে যাবেন। আবার অনেকে অভিযোগ তুলছেন, সরকার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অপোজিশনদের অবস্থান নির্ণয় করে দমন-পীড়ন চালাবেন যেভাবে ইসরাইল ফিলিস্থিনের উপর চালাচ্ছে। এটা আমি প্রথমেই বলেছি, প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। সরকার চাইলে প্রত্যেকটি জিনিসকে ভালো ও  খারাপ কাজে ব্যবহার করতে পারে। যেমন পুলিশ বাহিনি জনগণের বন্ধু হলেও অনেক সময় সরকারের প্রভাবে তারাও অপোজিশন পেঠোয়া বাহিনিতে পরিণত হয়। এখানে আমার বলার কিছু নেই। তবে কথা একটাই, এগিয়ে যেতে হলে পজিটিভলি চিন্তা করতে হবে।

এবার আসি একটু ভিন্ন বিশ্লেষণে। এত এত স্যাটেলাইটগুলো মহাকাশে কি করছে? যে স্যাটেলাইট যে কাজের উপযোগী করে বানানো হয়েছে, সেই স্যাটেলাইট সেসব কাজই করে। যেমন; তথ্য সংগ্রহ করা, বিভিন্ন গ্রহ ও স্থানের ছবি সংগ্রহ করা, আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের অগ্রীম আভাস দেওয়া, টিভি সিগনাল, ফোন কলের সংযোগ স্থাপন, জিপিএস সিস্টেম, দ্রুতগতির ইন্টারনেটসহ আরো অনেক কিছু। তবে একটি স্যাটেলাইট অনেকগুলো কাজ একসাথে করতে পারে। ধরুন এবছর দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রচুর বন্যা হবে যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা অগ্রীম জেনে গেলাম। এখন উত্তরাঞ্চলে যেসব আবাদী জমি আছে তাতে আমরা ফসল আবাদ করলাম না, তাতে আমাদের কৃষকেরা বড় ধরণের একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আর্থিক ক্ষতি থেকে অনায়াসে রেহাই পাবে। এবং নিজেরাও পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখলে বড় ধরণের কোন ক্ষতি হবে না। তাহলে তো স্যাটেলাইটের ৩০০০ কোটি টাকার ইনভেস্টম্যান্ট সার্থক হয়ে গেল।

একটি স্যাটেলাইট দিয়ে সাধারণত  পুরো পৃথিবী কাভারেজ দেওয়া যায় না। তাই পুরো পৃথিবী কাভারেজ দিতে হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে মিনিমাম ৩টি স্যাটেলাইট স্থাপন করতে হবে। স্যাটেলাইট দিয়ে যেহেতু পৃথিবীর বিভিন্ন কিছুর কাভারেজ নেওয়া হয় তাই স্যাটেলাইটকে ‍পৃথিবীর বাইরে অর্থাৎ মহাকাশে স্থাপন করতে হয়। তখন স্যাটেলাইট পৃথিবীতে কখন কি হচ্ছে  না হচ্ছে তাৎক্ষণিক বা আগাম বলে দিতে পারবে।

এখন আরো একটু গভীরভাবে ভাববো। মানুষের তৈরি ৩৫০০ কেজি ওজনের একটি ১৫/২০ বছরের স্বল্প মেয়াদী স্যাটেলাইট যদি পৃথিবী থেকে ৩৫ / ৫০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে পৃথিবীকে নিখুঁতভাবে স্ক্যান করতে পারে এবং এতকিছু ম্যাকানিজম করতে পারে তাহলে পৃথিবী ও মহাকাশের মালিক কেন নিজ কুদরতি আসন থেকে পৃথিবীর মানুষকে পর্যবেক্ষণ ও সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে না? (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) নাস্তিকদের পশ্নের জবাব এটি। তাছাড়াও আল্লাহ-তায়ালার লক্ষ-কোটি গ্রহ-নক্ষত্রগুলো মাহাকাশে কী সুতো কাটতেছে। নিশ্চয় এগুলোও পৃথিবীর ব্যালেন্সের জন্য একেক কাজে নিয়োজিত। সৃষ্টিকর্তা তো কোন কিছুই অযথা সৃষ্টি করেন নি। পরকালে আমাদের কর্মের যে ভিডিও ফুটেজ দেখাবেন তা এমনটাও হতে পারে আল্লাহর এই বিশাল গ্রহ, উপগ্রহ বা নক্ষত্রের কোন একটি আমাদের প্রতিনিয়ত ভিডিও রেকর্ড করে চলেছে। নাস্তিকরা অদৃশ্যে বিশ্বাস না করলেও বিজ্ঞানকে ঠিকই বিশ্বাস করেন। তাই স্যাটেলাইটের এই সহজ ধারণা থেকে চিন্তাশীলরা অনেক কিছুই ভাবতে পারে।

স্যাটেলাইট ও মহাকাশ নিয়ে আরো একটু গভীরভাবে বুঝার জন্য Gravity ও Interstellar মুভি দু’টি দেখতে পারেন। Interstellar মুভিটিতে আপনারা দেখবেন, মহাকাশে কীভাবে স্পেস যানের মাধ্যমে মানুষ যাত্রা করে এবং সেখানে মহাকাশ স্টেশনে নিজেদের যানকে এনকর করে ও গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ভ্রমণ করে। ওরা ৪ জন নভোচারী পৃথিবীর অল্টারনেটিভ কোন গ্রহ খুঁজতে সেখানে যায়, যেখানে মানুষ বসবাস করতে পারবে। কেননা, এই সুজলা-সুফলা পৃথিবী একদিন মনুষ্য বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়বে। মানুষ যেভাবে আবিষ্কারের অপ-ব্যবহার ও অধিক মুনাফা লাভের জন্য নিজেদের এবং পৃথিবীর ক্ষতি করে চলেছে তাতে সত্যিই পৃথিবী একদিন বসবাস অযোগ্য হয়ে যাবে। ওজন স্তরের ফাটল তার বড় উদাহারণ। তাছাড়াও খাদ্যে ভেজাল ও ফরমালিন মানুষ উজাড়ের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মানুষের আয়ু এত অল্প হয়ে যাওয়া ও এত রোগ-শোকের পেছনে মানুষই দায়ী। এর থেকে বের হওয়ার জন্য মহাকাশে অল্টারনেটিভ গ্রহ খুঁজার চেয়েও আমাদের নৈতিক উন্নতি সাধন আরো বেশি জরুরি ও কার্যকরি হবে। কারণ বিজ্ঞানীরা মহাকাশে যদি বসবাসযোগ্য কোন অল্টারনেটিভ গ্রহ পেয়েও যান তবুও শয়তান-পাপীষ্ট মানুষেরা পুরো সৃষ্টি জগতকেই বসবাস অযোগ্য করে তুলবে নিজেদের সাময়ীক তৃপ্তি ও কু-প্রবৃত্তি নিবারণের জন্য। আর নৈতিকতার উন্নতি সাধন করতে হলে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার দিকেই ফিরতে হবে মানুষকে। কুরআন-হাদিস ও যার যার ধর্মীয় কথাগুলো সঠিকভাবে মেনে চললেই মিলবে মানুষের আসল মুক্তি।

Interstellar মুভিটিতে আরো দেখানো হয়েছে, বিজ্ঞানি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক থিউরি বা Theory of relativity। কুরআন-হাদিসের বিভিন্ন যায়গায় পরকালের সময়ের ব্যাপকতার কথা বলা হয়েছে যে, পরকালের ১ দিন পৃথিবীর হাজার দিনের সমপরিমান বলা হয়েছে। এই মুভিতেও আইনস্টাইনের আপেক্ষিক থিউরির ভিত্তিতে দেখানে হয়েছে যে, ৩৫ বছরের যুবক পিতা তার ১২ বছরের মেয়েকে মাত্র ৫/৬ মাসের মহাকাশ ভ্রবণের পরে এসে দেখতে পান ৯৫ বছরের বুড়ি অথচ পিতার বয়স এখনো ৩৬ বা তার চেয়েও কম। বিজ্ঞান এভাবেই দিনের পর দিন প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে যে, আসলেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে।

প্রিয় বন্ধুরা স্যাটেলাইটের কথা বলতে গিয়ে অনেক কথায় বলে ফেলেছি। আমি সাইফুল বিন আ. কালাম সবাইকে আহবান করছি; আসুন পজেটিভলি ভাবি, এগিয়ে যায়। ভালো কিছু করি ও ন্যায়ের পথে চলি আর সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির রহস্য বুঝতে এবং সুন্দর পৃথিবী ও মন গড়তে সৃষ্টিকর্তার পবিত্র গ্রন্থগুলো অনুসরণ করি।

দয়াকরে কেউ লেখাটি কপি-পেস্ট করবেন না, প্রয়োজনে শেয়ার করতে পারেন। অন্যের লেখা কপি করা একটি বড় ধরনের চুরি ও মারত্মক অপরাধ।

লেখক: Saiful Bin A Kalam​,প্রিন্ট গ্রাফিক ডিজাইনার ও ইউটিউবার। চ্যানেল: https://www.youtube.com/saifulbinakalampost

Comments

Popular posts from this blog

কম্পিউটারে আরবি লিখন পদ্ধতি ও কিছু কথা (قَاعِدَةُ كِتَابَةِ الُّغَةِ العَرَبِيِّ فِي كَمْبِيُوتَرَ واقْوَالِهَا)

যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম  হলো ভাষা। পৃথিবীতে প্রায় ৭০০০-এরও অধিক ভাষা  (اللُّغَةُ) প্রচলিত রয়েছে। এসব ভাষায় বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীরা তাদের ভাব বিনিময় করে। তবে পৃথিবীর সব মানুষই তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ জন্যই কবি রামনিধি গুপ্ত বলেছেন-  “নানান দেশের নানা ভাষা  বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা?”   এরপরও বৈশ্বিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষকে বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করতে হয়।  ইংরেজি ও আরবি তার মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া মুখাভিনয়ের মাধ্যমেও মানুষ গ্লোবালি কমিউনিকেট করতে পারে। মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে আরবি ভাষা শিখাটা খুবই জরুরি। কুরআন ও হাদিসের প্রকৃত মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হলে আরবি ভাষা জানার বিকল্প নেই। আধুনিক শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার কম্পিউটার। কম্পিউটারের একেবারে প্রাথমিক ও মৌলিক স্কিল হচ্ছে টাইপিং। কম্পিউটার টাইপিং-এর সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো ফলো করলে খুব সহজে পৃথিবীর যে কোন ভাষা টাইপ করা যায়। আমি সাইফুল বিন আ. কালাম , ইংরেজি, বাংলা ও আরবি তিন ভাষারই টাইপিং পদ্ধতি নিয়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল বানিয়েছি। বাংলা টাইপিং টিউটোরিয়াল: https://youtu.be/

শিখুন ম্যাগাজিন ও বইয়ের প্লেট / সিটিপি সেটিং (জুরি)

একটি অ্যাড ফার্মে কাজ করতাম বছর তিনেক আগে। বই ও ম্যাগাজিনের অনেক কা জ করেছি। নির্দিষ্ট সাইজ নিয়ে .৭৫ ইন্সি অপসেট পাথ রেখে পেজকে কাজ অনুযায়ী দু কলাম তিন কলামে ভাগ করে লিংক করে কাজ করাটাই ডিজাইন। প্রতি ৮ পেজে ফর্মা হিসেব করে কাজ করতাম। কিন্তু বিপত্তিটা হতো আউটপুট সেটিং দিতে গিয়ে। শাফুল দা পেছনে বসে ডিরেকশন দিতো, আর আমি সেটিং দিতাম। ভাল করে বুঝতাম না। উনিও অত ইজি করে বোঝান নি। আমিও শেখার খুব আগ্রহ দেখাইনি কারণ সময়মত শাফুল দাকে তো পাচ্ছিই; তাহলে শুধু শুধু এত প্রেশার নিয়ে লাভ কী! কিন্তু একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাত্র বুঝবেন আউটপুট সেটিং যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতই ডিজাইন জানেন, প্রিন্টিং আউটপুট সেটিং যদি না বুঝেন, আপনাকে সঠিক মূল্যায়ন করা হবে না। ভাল প্রতিষ্ঠানে গেলেই প্রথম প্রশ্ন আউটপুট ছাড়তে পারবেন কি না? আউটপুট সেটিং ডিজাইনের প্রাণ। অবশ্য যারা শুধুই ফ্রিল্যান্সিং করেন, লোকাল কোম্পেনিতে কাজ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে এটা না জানলেও তেমন সমস্যা হবে না। তবে এ শিল্পে পেশাদার হতে হলে অবশ্যই প্রিন্ট আউটপুট সেটিং জানতে হবে। এরপর গুগল ও ইউটিউবে অনেক সার্চ করেও ভাল প্রিন্ট আউটপুট সেটিং-এর

সমাস শিখতে এখন আর ছয় মাস লাগেনা

সমাসের কাজ হলো একাধিক পদকে এক পদে পরিণত করা। সমাস শব্দের অর্থ হচ্ছে সংক্ষেপন বা লম্বা একটা বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করে এক শব্দে প্রকাশ করা। যেমন: শোক প্রকাশের সভা > শোকসভা। এখানে শোকসভাই হলো মূলত সমাস। আর শোক প্রকাশের সভা হলো সমাস বাক্য বা ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্য। আমরা জানি বাক্যের অন্তরগত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে আর সমাস বাক্য বা ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্যের প্রত্যেকটি শব্দকে সমস্যমান পদ বলে। আর সমাসকে অর্থাৎ ব্যাস বাক্য থেকে সংক্ষিপ্ত হওয়া পদটিকে বলে সমস্ত পদ। সমাজ ছয় প্রকার: আমার জনৈক বন্ধু সমাসের ছয় প্রকার কোন ভাবেই মনে রাখতে পারতো না। সে বলতো দিক অত বদদোয়া তবু আমি সমাসের ছয় প্রকার মনে রাখতে পারবনা। কিন্তু দিক অত বদদোয়া র মাঝেই সমাসের ছয় প্রকার রয়েছে।  দি = দ্বিগু ক = কর্মধারয় অ = অভ্যয়ীভাব ত = তৎপুরুষ ব = বহুব্রীহি দ = দ্বন্দ্ব প্রথমে আমরা কর্মধারয় সমাস নিয়ে বিস্তারিত শিখব। যে সমস্থ সমাসে আমরা কোন কিছুর সাথে তুলনা করি (বাস্তব, অবাস্তব বা রূপক) সেটিই কর্মধারয় সমাস। কর্মধারয় সমাস ৩ (তিন) প্রকার। উপমান  উপমিত রূপক উপমান শব্দের মাঝে আছে (উপমা), যেই উপমা সত্য