Skip to main content

বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক আলোচনা - Constitution of Bangladesh for Job Exam

সংবিধান (Constitution) একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। রাষ্ট্র এমন কোন আইন করতে পারবে না যা সংবিধান পরিপন্থী। এটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা রাখা রাষ্ট্রের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের কর্তব্য। পৃথিবীর প্রথম লিখিত রাষ্ট্রীয় সংবিধান হচ্ছে রাসূল (স.)-এর মদিনা সনদ যার ৪৭টি ধারা ছিল।
সমসাসাময়িক আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ও প্রথম প্রস্তাবনা সংবলিত সংবিধান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। আমেরিকার চতুর্থ প্রেসিডেন্ট জেমস (James Madison) মেডিসন ১৭৮৭ সালে এটি প্রবর্তন করেন। এর মাত্র ৭টি ধারা। আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লিখিত সংবিধান হচ্ছে ভারতের। এর ৪৪৮টি ধারা রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান (Constitution of Bangladesh) একটি সুপরিকল্পিত, লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। এটি রচনা করতে ১ বছরেরও কম সময় লেগেছে। যেখানে আমাদের আগে স্বাধীন হওয়া ভারত ও পাকিস্তানের সংবধিান রচনা করতে যথাক্রমে ৩ ও ১০ বছর সময় লেগেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ই জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে এসে প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করেন যার সদস্য সংখ্যা ছিল কিছু বাদ গিয়ে ৪০৩ জন। এখান থেকে ৩৪ জন সদস্য বাছায় করে সংবিধান রচনা কমিটি গঠন করেন। যার সভাপতি ছিলেন ড. কামাল হোসেন। এখানে ছিলেন মাত্র ১ জন বিরোধী দলীয় ও একজন মহিলা সদস্য যথাক্রমে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও বেগম রাজিয়া বানু।
২৩ মার্চ ১৯৭২ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত য়। ১২ অক্টোবর ১৯৭২ সংবিধানের খসড়া পেশ করা হয়। সর্বশেষ ৪ঠা নভেম্বর ১৯৭২ গৃহীত হয় এবং সর্বশেষ ১৬ই ডিসেম্বর থেকে সংবিধানের কার্যকারিতা শুরু হয়।
আমাদের সংবিধানের ১টি প্রস্তাবনা (Preamble), ১১টি অধ্যায়, ১৫৩টি ধারা ও ৭টি তফশিল রয়েছে।
সংবিধানের প্রস্তাবনা “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” দিয়ে শুরু হয়। এখানে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা, সংবিধানের মূলনীতির কথা, তাছাড়াও গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, সামাজিক সাম্য ও সুবিচারের কথা বলা হয়।
সংবিধানের কিছু উল্লেখযোগ্য ধারা:-
সংবিধানের ধারা ২(ক)তে বলা হয়; প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। উল্লেখ্য ১৯৮৮ সালের ১১ই মে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে তৎকালীন এরশাদ সরকার এটি সংযোজন করেন।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ ৮নং ধারায় উল্লেখ করা হয়। মূলনীতিগুলো হচ্ছে; সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতা। অর্থাৎ আমাদের অথনৈতিক ব‍্যবস্থা কার্লমাক্সের সমাজতন্ত্রের আলোকে পরিচালিত হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্রকে অনুসরণ করা হবে। ধর্মীয় কার্যকলাপের ক্ষেত্রে ধর্ম নিরপক্ষ হবে। সংস্কৃত ও ভাষাগত দিক দিয়ে বাংলাদেশি জাতিয়তাবাদকে মডেল ধরা হবে।
মূলনীতিগুলো আবার ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী ধারাগুলোতে উল্লেখ আছে। যেমন, ৯নং-এ জাতিয়তাবাদ, ১০-এ সমাজতন্ত্র, ১১-এ গণতন্ত্র ও ১২তে ধর্ম নিরপেক্ষতা।
ধারা ১৪তে কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির কথা বলা হয়েছে। ১৭তে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। ১৮-এর (ক)তে জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। ২২-এ নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের কথা বলা হয়েছে। এটি কার্যকর হয় ১ নভেম্বর ২০০৭ থেকে।
ধারা ২৩ (ক)-তে বলা হয় উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি, ধারা ২৫-এ আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন, ২৬-এ মৌলিক অধিকার, ২৭-এ আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ৩৩-এ গ্রেপ্তার ও আটক, ৩৬-এ চলাফেরার স্বাধীনতা, ৩৭-এ সমাবেশের স্বাধীনতা, ৩৮-এ সংগঠনের স্বাধীনতা, ৩৯-এ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা, ৪০-এ পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা, ৪১-এ ধর্মীয় স্বাধীনতা, ৫২-এ রাষ্ট্রপতির অভিশংসন, ৬৪-এ অ্যাটর্ণি জেনারেল, ও ৭৭-এ ন্যায়পাল (Ombudsman) সম্পর্কে।
সর্বশেষ ১৫৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয় সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজি ভার্ষণের কোন জায়গাই সংঘাত হলে বাংলাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
আরো বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখুন। এখানে সাইফুল বিন আ. কালাম ও সাজিদ মাহমুদ হেলাল আলোচনার মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। ভিডিওটি দেখলেই আরো অনেক অজানা তথ্য আবিষ্কার করতে পারবেন আশা করি।

Comments

Popular posts from this blog

কম্পিউটারে আরবি লিখন পদ্ধতি ও কিছু কথা (قَاعِدَةُ كِتَابَةِ الُّغَةِ العَرَبِيِّ فِي كَمْبِيُوتَرَ واقْوَالِهَا)

যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম  হলো ভাষা। পৃথিবীতে প্রায় ৭০০০-এরও অধিক ভাষা  (اللُّغَةُ) প্রচলিত রয়েছে। এসব ভাষায় বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীরা তাদের ভাব বিনিময় করে। তবে পৃথিবীর সব মানুষই তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ জন্যই কবি রামনিধি গুপ্ত বলেছেন-  “নানান দেশের নানা ভাষা  বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা?”   এরপরও বৈশ্বিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষকে বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করতে হয়।  ইংরেজি ও আরবি তার মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া মুখাভিনয়ের মাধ্যমেও মানুষ গ্লোবালি কমিউনিকেট করতে পারে। মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে আরবি ভাষা শিখাটা খুবই জরুরি। কুরআন ও হাদিসের প্রকৃত মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হলে আরবি ভাষা জানার বিকল্প নেই। আধুনিক শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার কম্পিউটার। কম্পিউটারের একেবারে প্রাথমিক ও মৌলিক স্কিল হচ্ছে টাইপিং। কম্পিউটার টাইপিং-এর সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো ফলো করলে খুব সহজে পৃথিবীর যে কোন ভাষা টাইপ করা যায়। আমি সাইফুল বিন আ. কালাম , ইংরেজি, বাংলা ও আরবি তিন ভাষারই টাইপিং পদ্ধতি নিয়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল বানিয়েছি। বাংলা টাইপিং টিউটোরিয়াল: https://youtu.be/

শিখুন ম্যাগাজিন ও বইয়ের প্লেট / সিটিপি সেটিং (জুরি)

একটি অ্যাড ফার্মে কাজ করতাম বছর তিনেক আগে। বই ও ম্যাগাজিনের অনেক কা জ করেছি। নির্দিষ্ট সাইজ নিয়ে .৭৫ ইন্সি অপসেট পাথ রেখে পেজকে কাজ অনুযায়ী দু কলাম তিন কলামে ভাগ করে লিংক করে কাজ করাটাই ডিজাইন। প্রতি ৮ পেজে ফর্মা হিসেব করে কাজ করতাম। কিন্তু বিপত্তিটা হতো আউটপুট সেটিং দিতে গিয়ে। শাফুল দা পেছনে বসে ডিরেকশন দিতো, আর আমি সেটিং দিতাম। ভাল করে বুঝতাম না। উনিও অত ইজি করে বোঝান নি। আমিও শেখার খুব আগ্রহ দেখাইনি কারণ সময়মত শাফুল দাকে তো পাচ্ছিই; তাহলে শুধু শুধু এত প্রেশার নিয়ে লাভ কী! কিন্তু একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাত্র বুঝবেন আউটপুট সেটিং যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতই ডিজাইন জানেন, প্রিন্টিং আউটপুট সেটিং যদি না বুঝেন, আপনাকে সঠিক মূল্যায়ন করা হবে না। ভাল প্রতিষ্ঠানে গেলেই প্রথম প্রশ্ন আউটপুট ছাড়তে পারবেন কি না? আউটপুট সেটিং ডিজাইনের প্রাণ। অবশ্য যারা শুধুই ফ্রিল্যান্সিং করেন, লোকাল কোম্পেনিতে কাজ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে এটা না জানলেও তেমন সমস্যা হবে না। তবে এ শিল্পে পেশাদার হতে হলে অবশ্যই প্রিন্ট আউটপুট সেটিং জানতে হবে। এরপর গুগল ও ইউটিউবে অনেক সার্চ করেও ভাল প্রিন্ট আউটপুট সেটিং-এর

সমাস শিখতে এখন আর ছয় মাস লাগেনা

সমাসের কাজ হলো একাধিক পদকে এক পদে পরিণত করা। সমাস শব্দের অর্থ হচ্ছে সংক্ষেপন বা লম্বা একটা বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করে এক শব্দে প্রকাশ করা। যেমন: শোক প্রকাশের সভা > শোকসভা। এখানে শোকসভাই হলো মূলত সমাস। আর শোক প্রকাশের সভা হলো সমাস বাক্য বা ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্য। আমরা জানি বাক্যের অন্তরগত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে আর সমাস বাক্য বা ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্যের প্রত্যেকটি শব্দকে সমস্যমান পদ বলে। আর সমাসকে অর্থাৎ ব্যাস বাক্য থেকে সংক্ষিপ্ত হওয়া পদটিকে বলে সমস্ত পদ। সমাজ ছয় প্রকার: আমার জনৈক বন্ধু সমাসের ছয় প্রকার কোন ভাবেই মনে রাখতে পারতো না। সে বলতো দিক অত বদদোয়া তবু আমি সমাসের ছয় প্রকার মনে রাখতে পারবনা। কিন্তু দিক অত বদদোয়া র মাঝেই সমাসের ছয় প্রকার রয়েছে।  দি = দ্বিগু ক = কর্মধারয় অ = অভ্যয়ীভাব ত = তৎপুরুষ ব = বহুব্রীহি দ = দ্বন্দ্ব প্রথমে আমরা কর্মধারয় সমাস নিয়ে বিস্তারিত শিখব। যে সমস্থ সমাসে আমরা কোন কিছুর সাথে তুলনা করি (বাস্তব, অবাস্তব বা রূপক) সেটিই কর্মধারয় সমাস। কর্মধারয় সমাস ৩ (তিন) প্রকার। উপমান  উপমিত রূপক উপমান শব্দের মাঝে আছে (উপমা), যেই উপমা সত্য