Skip to main content

আমার বাংলাদেশ ও বাংলা (১ম পর্ব) | সাইফুল বিন আ. কালাম

মহাবিস্ফোরণের {(Big Bang - স্টিফেন হকিন্স) - كُنْ فَيَكُنْ} সাথে সাথেই পৃথিবীর প্রতিটি দেশ আলাদা করে চিহ্নিত হয়নি। কালের পরিক্রমায় প্রতিটি দেশের আজকের এই রূপ। প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশ একেক সময় একেক নামে পরিচিত ছিল যেমন; বঙ্গ, বাঙ্গালা, বাংলা, গৌড়, রাঢ়, বঙ্গাল বা বঙ্গদেশ। রামায়ণ ও মহাভারতে একাধিক বার বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। মুঘল ঐতিহাসিক আবুল ফজল তাঁর বিখ্যাত ‘আইন-ই-আকবরী' গ্রন্থে প্রথম “বাংলা” শব্দের উল্লেখ করেন। আরো বিস্তারিত জানার জন্য হুমায়ুন আজাদের ‘লাল নীল দিপাবলী’ বইটি পড়তে পারেন। বাংলা অঞ্চলের প্রথম স্বাধীন রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলায় এক অরাজক অবস্থার তৈরি হয়েছিল। যা ইতিহাসে মাৎস্যন্যায় নামে পরিচিত। প্রায় দেড়শ বছর ধরে আর কোন স্বাধীন ও কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতি ছিল না এই বাংলায়। পরে গোপাল নামক এক সামন্ত রাজাকে স্থানীয় জনগণ বাংলার রাজা হিসেবে নির্বাচন করেন। এই রাজ বংশ প্রায় ৪০০ বছর স্থায়ী ছিল। পালদের পতনের পর সেন বংশের উত্থান হয়েছিল। প্রাচীন কালে বাংলায় একক বা কেন্দ্রীয় কোন শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল না। ছোট ছোট এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল একেকটি জনপদ। বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে পাঁচটি জনপদ ছিল। যেমন; (১) হরিকেল (চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা ও সিলেট), (২) সমতট (নেয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লা), (৩) গৌড় (চাপাই নবাবগঞ্জ, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমান), (৪) পুণ্ড্র (উত্তর বঙ্গের সমস্ত অঞ্চল যেমন: বৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর) ও (৫) বঙ্গ (বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল যেমন: কুষ্টিয়া, যশোর, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারিপুর ও বৃহত্তর ময়মনশিংহ)। বাকী সব জনপদ বর্তমান ভারত ভূখণ্ডে অবস্থিত ছিল যা আমাদের আপাতত না জানলেও চলবে। এই বাংলায় পাল ও সেনদের রাজত্বের অবসানের পর মুসলিমদের অনুপ্রবেশ ঘটে। ৭১২ সালে প্রথম মুহাম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের উদ্ভব হয়। মুসলিমরা ১০০০ বছরেরও বেশি এই উপ-মহাদেশ শাসন করে। তখনও বাংলা অঞ্চলে সেনদের রাজত্ব চলছিল। ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের মাধ্যমে বাংলা মুসলিমদের শাসনাধীন হয়। তখন নদীয়া শাসন করছিলেন সেন বংশের সর্বশেষ রাজা লক্ষণ সেন। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব, নবাব আলিবর্দী খাঁর নাতি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। খালা ঘসেটি বেগম ও ইংরেজদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফলে ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর আম বাগানে, ভগিরতি নদীর তীরে নবাব ইংরেজদের হাতে নির্মমভাবে পরাজিত হন। এরই মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য প্রায় ২০০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়ে যায়। ব্রিটিশ পিরিয়ডে (১৭৫৭-১৯৪৭) বাংলার পরিধি ছিল পশ্চিম বঙ্গ (কলকাতা, বিহার, উড়িষ্যা) ও পূর্ব বঙ্গ (বাংলাদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম) মিলে। ভারত বর্ষের সবচেয়ে বড় অঞ্চল ছিল তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি। ব্রিটিশরা এত বিশাল বাংলাকে কলকাতা থেকে শাসন করতে পারছিল না বলে লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে রাজনৈতিক কারণে বাংলা বিভক্ত করেছিল। যার একবছর পরে অর্থাৎ ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল। যদিও হিন্দুদের চাপের মুখে ১৯১১ সালে বাংলা বিভক্তি রদ করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে রেডক্লিফ কমিশন বাংলার বৃহৎ অঞ্চলকে ভারতের সাথে জুড়ে দেয় যেমন; কলকাতা, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও মিজোরাম। আর বাংলার বর্তমান ভূ-খণ্ডকে পাকিস্তানের গোলাম বানিয়ে দেই। যার ফলে ২০০ বছর ব্রিটিশদের গোলাম হয়ে থাকার পর, আরো ২৪ বছরের জন্য পাকিস্তানের গোলাম হয়ে ছিলাম। পাকিস্তানের মূল ভূ-খণ্ড থেকে প্রায় দু-হাজার কিলোমিটার দূরে হয়েও আমরা পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত হয়েছিলাম। কী অদ্ভুদ দেশ বিভাজন! এরপরও বাঙালিরা চেয়েছিল মুসলমান-মুসলমান ভাই ভাই হয়ে মিলে থাকার জন্য। পূর্ববাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান অনেক চেয়েছিলেন নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায় করে ভাই ভাই মিলে থাকার জন্য। কিন্তু সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও জুলফিকার আলী ভুট্টুর উগ্রবাদিতা ও ষড়যন্ত্রের কারণে এটি আর সম্ভব হয়নি। এই ২৪ বছর সময়ে বাঙ্গালি নানাভাবে নিষ্পেষিত হয়েছে। পাকিরা নানামুখী ষড়যন্ত্রের প্রাসাদ বুনেছিল। তারা বাঙ্গালির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। ভাষা আন্দোলনভিত্তিক নানা সংঘঠন গড়ে উঠেছিলো তখন। তমদ্দুন মজলিশ তার মধ্যে অন্যতম। মরতে হয়েছিল আমার ভাইদের। তারা ১৯৫২ সালের ২১ই ফেব্রুয়ারি পাখির মত গুলি করে মেরেছিল আমার ভাই রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউর ও অহী উল্লাহকে। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অনেকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক গোলাম আযম প্রমুখ।   পরবর্তীতে ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলে ইয়াহিয়া খান জুলফিকার আলীর প্ররোচনাই ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে থাকে। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের পর বাঙ্গালিরা স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কারণ বাঙ্গালিরা আর কতদিন অত্যাচারীদের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হবে? ২৫শে মার্চ পাকিরা এ দেশে অপারেশন সার্চ লাইট নামে গণহত্যা চালাই ও বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। এরই মধ্য দিয়ে বেজে উঠে যুদ্ধের দামামা! ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তৎকালীন মেজর ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে। অবশেষে মুজিব নগর সরকারের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় বর্তমান মুজিব নগরে গঠন করা হলো অস্থায়ী মুজিব নগর সরকার। ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছিলেন। অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলো পাকস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সৈয়দ নাজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর-রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন যথাক্রমে তাজউদ্দীন আহমদ, এম. মনসুর আলী, এ. এইচ. এম কামরুজ্জামান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করলাম। ১৬ই ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি দেশের স্থান হলো যার নাম বাংলাদেশ। এভাবেই একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।  

Comments

Popular posts from this blog

কম্পিউটারে আরবি লিখন পদ্ধতি ও কিছু কথা (قَاعِدَةُ كِتَابَةِ الُّغَةِ العَرَبِيِّ فِي كَمْبِيُوتَرَ واقْوَالِهَا)

যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম  হলো ভাষা। পৃথিবীতে প্রায় ৭০০০-এরও অধিক ভাষা  (اللُّغَةُ) প্রচলিত রয়েছে। এসব ভাষায় বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীরা তাদের ভাব বিনিময় করে। তবে পৃথিবীর সব মানুষই তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ জন্যই কবি রামনিধি গুপ্ত বলেছেন-  “নানান দেশের নানা ভাষা  বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা?”   এরপরও বৈশ্বিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষকে বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করতে হয়।  ইংরেজি ও আরবি তার মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া মুখাভিনয়ের মাধ্যমেও মানুষ গ্লোবালি কমিউনিকেট করতে পারে। মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে আরবি ভাষা শিখাটা খুবই জরুরি। কুরআন ও হাদিসের প্রকৃত মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হলে আরবি ভাষা জানার বিকল্প নেই। আধুনিক শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার কম্পিউটার। কম্পিউটারের একেবারে প্রাথমিক ও মৌলিক স্কিল হচ্ছে টাইপিং। কম্পিউটার টাইপিং-এর সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো ফলো করলে খুব সহজে পৃথিবীর যে কোন ভাষা টাইপ করা যায়। আমি সাইফুল বিন আ. কালাম , ইংরেজি, বাংলা ও আরবি তিন ভাষারই টাইপিং পদ্ধতি নিয়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল বানিয়েছি। বাংলা টাইপিং টিউটোরিয়াল: https://youtu.be/

শিখুন ম্যাগাজিন ও বইয়ের প্লেট / সিটিপি সেটিং (জুরি)

একটি অ্যাড ফার্মে কাজ করতাম বছর তিনেক আগে। বই ও ম্যাগাজিনের অনেক কা জ করেছি। নির্দিষ্ট সাইজ নিয়ে .৭৫ ইন্সি অপসেট পাথ রেখে পেজকে কাজ অনুযায়ী দু কলাম তিন কলামে ভাগ করে লিংক করে কাজ করাটাই ডিজাইন। প্রতি ৮ পেজে ফর্মা হিসেব করে কাজ করতাম। কিন্তু বিপত্তিটা হতো আউটপুট সেটিং দিতে গিয়ে। শাফুল দা পেছনে বসে ডিরেকশন দিতো, আর আমি সেটিং দিতাম। ভাল করে বুঝতাম না। উনিও অত ইজি করে বোঝান নি। আমিও শেখার খুব আগ্রহ দেখাইনি কারণ সময়মত শাফুল দাকে তো পাচ্ছিই; তাহলে শুধু শুধু এত প্রেশার নিয়ে লাভ কী! কিন্তু একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাত্র বুঝবেন আউটপুট সেটিং যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতই ডিজাইন জানেন, প্রিন্টিং আউটপুট সেটিং যদি না বুঝেন, আপনাকে সঠিক মূল্যায়ন করা হবে না। ভাল প্রতিষ্ঠানে গেলেই প্রথম প্রশ্ন আউটপুট ছাড়তে পারবেন কি না? আউটপুট সেটিং ডিজাইনের প্রাণ। অবশ্য যারা শুধুই ফ্রিল্যান্সিং করেন, লোকাল কোম্পেনিতে কাজ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে এটা না জানলেও তেমন সমস্যা হবে না। তবে এ শিল্পে পেশাদার হতে হলে অবশ্যই প্রিন্ট আউটপুট সেটিং জানতে হবে। এরপর গুগল ও ইউটিউবে অনেক সার্চ করেও ভাল প্রিন্ট আউটপুট সেটিং-এর

সমাস শিখতে এখন আর ছয় মাস লাগেনা

সমাসের কাজ হলো একাধিক পদকে এক পদে পরিণত করা। সমাস শব্দের অর্থ হচ্ছে সংক্ষেপন বা লম্বা একটা বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করে এক শব্দে প্রকাশ করা। যেমন: শোক প্রকাশের সভা > শোকসভা। এখানে শোকসভাই হলো মূলত সমাস। আর শোক প্রকাশের সভা হলো সমাস বাক্য বা ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্য। আমরা জানি বাক্যের অন্তরগত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে আর সমাস বাক্য বা ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্যের প্রত্যেকটি শব্দকে সমস্যমান পদ বলে। আর সমাসকে অর্থাৎ ব্যাস বাক্য থেকে সংক্ষিপ্ত হওয়া পদটিকে বলে সমস্ত পদ। সমাজ ছয় প্রকার: আমার জনৈক বন্ধু সমাসের ছয় প্রকার কোন ভাবেই মনে রাখতে পারতো না। সে বলতো দিক অত বদদোয়া তবু আমি সমাসের ছয় প্রকার মনে রাখতে পারবনা। কিন্তু দিক অত বদদোয়া র মাঝেই সমাসের ছয় প্রকার রয়েছে।  দি = দ্বিগু ক = কর্মধারয় অ = অভ্যয়ীভাব ত = তৎপুরুষ ব = বহুব্রীহি দ = দ্বন্দ্ব প্রথমে আমরা কর্মধারয় সমাস নিয়ে বিস্তারিত শিখব। যে সমস্থ সমাসে আমরা কোন কিছুর সাথে তুলনা করি (বাস্তব, অবাস্তব বা রূপক) সেটিই কর্মধারয় সমাস। কর্মধারয় সমাস ৩ (তিন) প্রকার। উপমান  উপমিত রূপক উপমান শব্দের মাঝে আছে (উপমা), যেই উপমা সত্য